
রোজ সকাল ৭টা বাজলেই রিয়ার ফোনটা বেজে উঠত। স্ক্রিনে ভেসে উঠত নাম— “বাবা”। ফোন তুলতেই চেনা কণ্ঠস্বর, “সুপ্রভাত মা! খেয়েছিস? অফিসে যেতে দেরি করিস না। আর কাজের মাঝে পানি খেতে ভুলিস না।”
কখনো কখনো রিয়া একটু বিরক্ত হতো। “বাবা, আমি তো বড় হয়ে গেছি। এত চিন্তা করার দরকার নেই।” বাবার হালকা হাসির উত্তর আসত, “তুই যতই বড় হ, আমার কাছে তুই ছোটই থাকবি।”
এভাবেই প্রতিদিনের এই কলটা রিয়ার জীবনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। কখনো গুরুত্ব দেয়নি, কখনো ভাবেনি কী ভালোবাসা লুকিয়ে আছে এই সাধারণ কথাগুলোর মধ্যে।
কিন্তু একদিন সকালে সেই ফোনটা এল না। প্রথমে রিয়া ভাবল হয়তো বাবা একটু দেরি করছেন। সময় গড়াতে থাকল, কিন্তু ফোন আর এল না। অজানা এক দুশ্চিন্তা তাকে গ্রাস করতে লাগল।
তাড়াহুড়ো করে সে বাবাকে ফোন করল। কোনো সাড়া নেই। তখনই মা ফোন করে জানালেন, বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
রিয়া সব কাজ ফেলে ছুটে গেল বাবার কাছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা বাবার ক্লান্ত মুখ দেখে তার চোখে পানি চলে এল। বাবার হাতটা ধরে বলল, “বাবা, কেন বলেননি কিছু? আমি তো এতদিন তোমার প্রতিদিনের ফোনটা কতটা মিস করতাম, সেটা বুঝতেই পারিনি।”
বাবা মৃদু হেসে বললেন, “মা, প্রতিদিন তোকে ফোন করাটা শুধু তোর জন্য ছিল না। এটা আমার জন্যও। তোকে সুস্থ দেখে দিন শুরু করাটাই আমার সবচেয়ে বড় সুখ।”
সেদিন থেকে রিয়া প্রতিজ্ঞা করল, বাবার ভালোবাসার এই ছোট্ট অভ্যাসগুলো কখনো অবহেলা করবে না। এখন সে-ই সকালে ফোন করে বলে, “সুপ্রভাত বাবা, আজকের দিনটা ভালো কাটুক।”
রিয়া বুঝেছিল, ভালোবাসা সবসময় বড় কিছু দিয়ে প্রকাশ পায় না। ছোট ছোট অভ্যাসগুলোতেই লুকিয়ে থাকে গভীর যত্ন আর আবেগ।